Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি বাঁচাও স্লোগান মানববন্ধন করেন সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের

সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের 

 
তারিখঃ ২৭/০৮/২১ 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) একটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা আত্মঘাতী একটি উদ্যোগ বলে আমরা মনে করি। ‘অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনটি হয় ১৮৯৫ সালের। শতবর্ষী বৃক্ষ, প্রাণ-প্রকৃতি, পাহাড়-টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এই এলাকাটি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। আশপাশের পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর আবাস। শিরিশ গাছের তলায় প্রতিবছর হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, বসে মেলা, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এই ইট-পাথরের রুক্ষ-কঠিন শহরের উঁচু উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা সিআরবি'কে চট্টগ্রামে ফুসফুস বলা হয়ে থাকে। পাহাড়ের মাঝে প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে শতবর্ষী অনেক গাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি এখানকার সবুজ নৈসর্গ ধ্বংস হয়ে যাবে। নাগরিক জীবনে ক্লান্ত নগরবাসী একটু পার্থিব জগতের সব ব্যস্ততা আর জীবনের হিসাব-নিকাশে যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত, তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এখানে এসে বসে। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রবের কবর। এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। এই সিআরবি'তে অনেকে শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। রেলের অনেক শ্রমিক কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এই সিআরবি তথা পাহাড়তলী ছিল বিপ্লবের সূতিকাগার। সেসব স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে। 

সিআরবি এলাকায় এই প্রকল্প স্থাপিত হলে সেটির নেতিবাচক প্রভাব শুধু প্রকল্পের নির্দিষ্ট স্থানেই সীমিত থাকবে না। এটি শুধু শতবর্ষী বৃক্ষ না কাটার বিষয় নয়, সময়ের প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকা ঘিরে নতুন নতুন দালান, অবকাঠামো, দোকানপাট, পার্কিং, ফার্মেসি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবাসিক ভবনে ছেয়ে যাবে। যার ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। 

জলবায়ু ও পরিবেশ কর্মী মোফাজ আহমেদ বলেন, 
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, একটু চিন্তা করুন তো আপনারা চাইলেই অন্য জায়গায় একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল বানাতে পারবেন কিন্তু এই সিআরবি'র মনোরম পরিবেশ একবার নষ্ট করলে আগামী ৫০ বছরেও কি তা ফিরিয়ে দিতে পারবেন? পারবেন না। সর্বশেষ বলতে চাই, 'সিআরবি'রশতবর্ষী বৃক্ষে করাত বসানোর সাহস দেখাবেন না।'

জলবায়ু ও পরিবেশ কর্মী এবং সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ-এর প্রধান সমন্বয়ক নয়ন সরকার বলেন, আজকে দেশের সর্বত্রই পরিবেশ ধ্বংসের মহোৎসব চলছে। আচ্ছা দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সংকটাপন্ন করে কীভাবে টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব? মুখে মুখে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে পরিবেশ কে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। বেশ কিছু প্রকল্পে এটা প্রমাণিত। কে কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করবে তার প্রতিযোগিতা চলছে। একদল দেশের পরিবেশ নিয়ে অর্থের খেলায় মেতে উঠেছে। অর্থের জন্য এবার সিআরবি'কে ইউনাইটেডের হাতে তুলে দিয়েছে। এই সমস্ত অর্থলোভীরা কিছুদিন আগে গাছ কেটে ঢাকার ফুসফুসে আঘাত করেছিল; এখন আবার চট্টগ্রামের ফুসফুসে আঘাত করার উদ্যােগ নিয়েছে। আর এদের বিচরণ সবখানে রয়েছে। দিনকে দিন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বেড়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভূগছে। যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন। বিশ্ব তাই করতেছে। আর সেখানে আমাদের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং ইউনাটেড কর্তৃপক্ষ গাছ কেটে হাসপাতাল করতে চায়। আমাদের কে গাছের অক্সিজেন নয় সিলিন্ডার অক্সিজেন সেবন করাতে চায়। করোনা ভাইরাস থেকে এরা শিক্ষা নেয়নি। দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুস্থ নেই। পরিবেশ কীভাবে সুস্থ রাখা যায় সেই শিক্ষা নিতে হবে। 'ইট’স টাইম ফর এ চেঞ্জ'

এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি রক্ষায় আমাদের চার দাবিঃ

১/ সিআরবি'তে হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। 

২/ সিআরবি'কে 'জাতীয় হেরিটেজ' হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং সিআরবি'র প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্যােগ নিতে হবে। 

৩/ সিআরবি'তে অবস্থিত বর্তমান রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করে চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হবে৷ 

৪/ যারা এই আত্মবিধ্বংসী উদ্যােগের সাথে জড়িত হয়েছে,  তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

 

Post a Comment

0 Comments